বাবা-মাকে গালি দেওয়ায় স্ত্রীকে হত্যার পর মাটিচাপা

মানিকগঞ্জ সদরে নির্মাণাধীন ভবনের মেঝে খুঁড়ে পাওয়া নারীর অর্ধগলিত মরদেহের পরিচয় মিলেছে। ওই নারীর নাম রোকসানা আক্তার (৩০)। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে যান তার স্বামী। হত্যাকাণ্ডের ছয় দিন পর পুলিশ রোকসানার স্বামী বাবুল মিয়াকে (৩৮)গ্রেফতার করলে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়।বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে বাবুল মিয়াকে খুলনার কোতয়ালি থানার হাসিদ পার্ক থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বাবুলের বাড়ি জেলার হরিরামপুর উপজেলার দড়িকান্দি গ্রামে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা নয়াবাড়ী এলাকার মৃত ছইজুদ্দীনের মেয়ে নিহত রোকসানা আক্তার। তিন বছর আগে বাবুল রোকসানাকে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পরই সৌদি আরবে চলে যান রোকসানা। বিদেশ থেকে নিয়মিত দেশে স্বামীর কাছে টাকা পাঠাতেন তিনি। সেই টাকা দিয়ে সদর উপজেলার শানবান্দা এলাকায় জমি কিনে একতলা বাড়ি নির্মাণ করেন বাবুল।

গত ৬ অক্টোবর ছুটিতে দেশে আসেন রোকসানা। পরে সাভারের একটি ভাড়া বাসায় স্বামী বাবুলকে নিয়ে থাকেন। ১৩ অক্টোবর শানবান্দা গ্রামে নিজেদের নির্মাণাধীন বাড়ি দেখতে আসেন রোকসানা ও বাবুল। রাতে একটি কক্ষে তারা থাকেন। সেখানে পারিবারিক বিষয় ও বাবুলের প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়া নিয়ে রোকসানার সঙ্গে বাবুলের কথাকাটি হয়। এর পর এক সময় রোকসানা ঘুমিয়ে যান।

ঘুমের মধ্যেই কাপড়ের পাড়ের রশি গলায় পেঁচিয়ে রোকসানাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বাবুল। এরপর তার পরণের সালোয়ার কামিজ ও পাড়ের রশি পুড়িয়ে ফেলেন। মরদেহ গুমের জন্য পাশের রুমের মেঝেতে নিজেই কোদাল দিয় গর্ত করে মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে যান।

তিন দিন পর ওই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ আসলে আশপাশের লোকজন নির্মাণাধীন ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন। রুমের ভেতর থেকে গন্ধের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে রুমের ভেতরের মাটি সরালে একটি হাত বেড়িয়ে আসে। পরে বিষয়টি মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয়ের ওই নারীর মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে পাঠায়। এরপর মরদেহের ডান হাতের ট্যাটু ও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ঘড়ি এবং মুখায়ব দেখে স্বজনরা তার মরদেহ শনাক্ত করেন। ওই দিনই নিহতের ভাই ফজল হক সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার জানান, মামলার পর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সদর থানার এসআই মো. টুটুল ও এসআই শাহজামালের নেতৃত্বে একটি টিম খুলনা হাদিস পার্কের সামনে থেকে বাবুলকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি বাবুল তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছেন।পুলিশ হেফাজতে থাকা বাবুল জানান, রোকসানা তাকে বাড়ি করার জন্য ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। ঘটনার দিন ঝগড়ার সময় বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে গালি দেওয়ার কারণেই রোকসানাকে হত্যা করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *