দ্বিতীয় বিয়ে করায় বের করে দেন ছেলে, ঝুপড়ি ঘরে জীবন কাটছে তাদের

রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে ৫ বছরে ধরে জীবনযাপন করছেন শতবর্ষী জব্বার মন্ডল ও আঙ্গুরী বেগম দম্পতি। জব্বার মন্ডলের প্রথম স্ত্রী অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করায় তার ছেলে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। জব্বার মন্ডল ও আঙ্গুরী বেগম দম্পতির বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ি পৌরসভার আদিয়ারপাড়া এলাকায়। ওই এলাকার দাঁতভাঙ্গা সেতুর পাশে সড়কে বর্তমানে তাদের বসবাস। ১০০ বছর বয়সী জব্বার মন্ডলের তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

তবে সন্তানদের কেউই তার খোঁজখবর নেন না। ১৯ বছর আগে তার প্রথম স্ত্রী আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। পরে জব্বার মন্ডলের একা চলাফেরা ও খাওয়া কষ্ট হাওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে চান করতে চান। এতে বাধা দেন একমাত্র ছেলে জহরুল ইসলাম। ছেলের কথা না শুনে তিনি বিয়ে করেন। তারপরেই বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ছেলে। মেয়েরা‌ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে দীর্ঘদিন দ্বিতীয় বউয়ের বাড়িতেই ছিলেন তিনি। তবে সেখানেও আর থাকা সম্ভব হয় না তাদের। তাই পাঁচ বছর ধরে রাস্তার পাশে ছোট একটি ঘরে বসবাস করছেন জব্বার মন্ডল ও আঙ্গুরী বেগম। জব্বার মন্ডলের দ্বিতীয় বিয়ে পরে তাদের কোন সন্তান হয়নি। তবে এ বয়সে তাদের এমন ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসী।

জব্বার মন্ডলের একমাত্র ছেলে জহরুল ইসলাম গরু ব্যবসায়ী আদিয়ারপাড়া এলাকায় তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন। এবিষয়ে জহরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী জানান, অনেক আগেই জব্বার মন্ডল নিজ ইচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।সরেজমিনে দেখা গেছে, জব্বার মন্ডল ও আঙ্গুরী বেগম দুইজন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আয় রোজগার করতে পারেন না। রাস্তার পাশে যে ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে বাস করে সেটার বাঁশের খুঁটিতে ঘুণ ধরেছে। জরাজীর্ণ ঘরটি খুব নড়বড়ে। যে কোনো সময়ই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একদিকে একটু বৃষ্টি হলে ঘরের ভাঙা চাল দিয়ে ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে সবকিছু ভিজে যায়। বর্তমানে তাদের একটি গরু ও কিছু হাঁস -মুরগি পালন করে বিক্রি করে ও ভাতার কার্ডের টাকা দিন চলছে। তাদের শেষ বয়সে চাওয়া শুধু একটি থাকার ভালো ঘর।

জব্বার মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৯ বছর আগে আমার প্রথম বউ প্যারালাইসিস রোগ হয়ে মারা গেছে। আমার তিন মেয়ে আর এক ছেলে আছে। বউ মারা যাওয়ার কয়েকদিন পরে মেয়ে আর ছেলে আমার ঘরের জিনিসপাতি ভাগাভাগি করে নিয়ে নিছে। এডা গরু ছিল তাও রাত ১২টা সময় এসে মেয়ে নিয়ে গেছে গা। পরে ঘোরাফেরা করি কেউ আমার আর খোঁজখবর নেই না। খাবারও দেই না। একা একা কিছু করতেও পারি না।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমি দ্বিতীয় কাজ (বিয়ে) করি। আমার বউ নিয়ে বাড়ি গেলে আর ছেলে বাড়িতে উঠবার দেয় নাই। বাড়ি থেকে বের করে দিল। পরে দ্বিতীয় বউয়ের বাড়িতে গিয়ে অনেক বছর থাকলাম। ওই বাড়িতে জায়গা কম লোকজন বেশি। পরে ওই খান থেকে এখানে আসলাম। সড়কের পাশে একটা ঘর করলাম। এখন একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। খুব কষ্টে দিন যাইতাছে। প্রতি দিন ওষুধ খাইতে হয়। টাকা-পয়সাও নাই। কয়েকটা হাঁস মুরগি বেঁচে কোনোরকম চলে। সরকারের কাছে আমাদের শুধু একটাই চাওয়া এখন আমাদের একটা কোনোরকম থাকার মতো ঘর হলেই ভালোভাবে বাঁচতে পারব।

জব্বার মন্ডল আরও বলেন, যে ছেলে আমাকে বের করে দিয়েছে। আর তার কাছে কিছুই চাই না। তাদের কাছে যাইতেও চাই না। যতদিন বেঁচে আছি বউয়ের কাছেই থাকব।জব্বার মন্ডল ও আঙ্গুরের জীবনযাপন নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন ঢাকা পোস্ট বলেন, জব্বার মন্ডল ৫ বছর ধরে এই জায়গায় একটা ঝপড়ি ঘর তুলে থাকছেন। তার একটা ছেলে আছে ছেলের অর্থ সম্পদ মোটামুটি ভালোই রয়েছে। তার প্রথম বউ মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

দ্বিতীয় বিয়ে করার পর ছেলে ঝগড়া করে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এখন ১০-১২টা করে হাঁস-মুরগি পেলে বড় করে বাজারে বিক্রি করে। আর বয়স্ক ভাতার কিছু টাকা পায় তা দিয়েই তাদের দিন চলছে। বর্তমানে যে ঘরটা রাস্তার পাশে তারা করেছে। ওই ঘরে এখন থাকার মতো না। ঘরে চালায় কয়েক জায়গায় ভাঙা, বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। ঘরের বেড়া ঠিক নেই ভেঙে গেছে। কেউ যদি তাদের ঘর মেরামত করে দেন বা নতুন একটি ঘর তৈরি করে দেন তাহলে তাদের সমস্যা হবে না।জব্বার মন্ডল ও আঙ্গুরী বেগম দম্পতির বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বিষয়টি আপনাদের থেকে জানলাম। জব্বার মন্ডলের খোঁজ খবর নিয়ে সহযোগিতার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *